আমাদেরবাংলাদেশ ডেস্ক।। মার্কিন বিমান হামলায় ইরানের শীর্ষ সেনা কর্মকর্তা মেজর জেনারেল কাশেম সোলাইমানির মৃত্যুতে ফের মুখোমুখি ইরান-যুক্তরাষ্ট্র। পাল্টা-পাল্টি হুমকিতে যুদ্ধের মেঘ ঘণিভূত হচ্ছে মধ্যপ্রাচ্যে। পরিস্থিতি এমন দিকে গড়াচ্ছে, তাতে যে কোনো সময় ভয়াবহ যুদ্ধের শঙ্কা করা হচ্ছে বিভিন্ন মহল থেকে।
শুক্রবার ভোরে বাগদাদ এয়ারপোর্টে মার্কিন বিমান হামলায় মৃত্যু হয় ইরানের কুদস ব্রিগেডের কমান্ডার মেজর জেনারেল কাশেম সোলাইমানি-সহ ৮ জনের। এ ঘটনায় উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে গোটা ইরান। দেশটির সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খোমেনি ইরানে তিনদিনের রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা করেছেন। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে কড়া হুশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন। এক শোকবার্তায় তিনি বলেছেন, যেসব অপরাধী তাদের নোংরা হাত দিয়ে গতরাতে মেজর জেনারেল সোলাইমানির রক্ত ঝরিয়েছে তাদের জন্য কঠোর প্রতিশোধ অপেক্ষা করছে। বিশ্বের কুচক্রি ও শয়তানি শক্তিগুলোর বিরুদ্ধে বহু বছর ধরে একনিষ্ঠ ও বীরোচিত জিহাদ চালিয়ে গেছেন জেনারেল সোলাইমানি। তিনি দীর্ঘদিন ধরে শাহাদাতের অমীয় সুধা পান করার যে আকাঙ্ক্ষা পোষণ করতেন শেষ পর্যন্ত সেই উচ্চ মর্যাদায় তিনি অধিষ্টিত হয়েছেন; তবে তার রক্ত ঝরেছে মানবতার সবচেয়ে বড় দুশমন ও সবচেয়ে জালিম শাসক আমেরিকার হাতে। তার চলে যাওয়ায় তার রেখে যাওয়া পথ বন্ধ হবে না।
ইরানের সর্বোচ্চ নেতা বলেন, শহীদ সোলাইমানি প্রতিরোধ আন্দোলনের একজন আন্তর্জাতিক ব্যক্তিত্ব ছিলেন বলে এই আন্দোলনের নিবেদিতপ্রাণ প্রতিটি কর্মী তার শাহাদাতের বদলা নিতে প্রস্তুত রয়েছেন। কাজেই সকল বন্ধু ও শত্রুর জেনে রাখা উচিত জেনারেল সোলাইমানির শাহাদাতের পর দ্বিগুণ উৎসাহে প্রতিরোধ আন্দোলন এগিয়ে যাবে এবং এই আন্দোলনের বিজয় অনিবার্য। যারা সোলেমানির রক্তে হাত রাঙিয়েছে তাদের জন্য চরম প্রতিশোধ অপেক্ষা করছে। ইরানের সর্বোচ্চ নেতার পাশাপাশি প্রেসিডেন্ট, সংসদ স্পিকার, বিচার বিভাগের প্রধান এবং সামরিক বিভাগের প্রধানেরা জেনারেল সোলাইমানির মৃত্যুতে তীব্র নিন্দা জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছেন ও হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন। দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী জাভেদ জারিফও সাফ বলেছেন, ‘এই হামলার পর পরিস্থিতির অবনতি হলে তার দায় নিতে হবে আমেরিকাকে।’
এদিকে কাসেম সোলাইমানির মৃত্যুতে আজ গোটা ইরানে বিক্ষোভ ও শোকানুষ্ঠান অব্যাহত রয়েছে। রাজধানী তেহরানে জুমার নামাজের পর মুসল্লিরা বিক্ষোভ করেছেন এবং রাজধানীর মসজিদ ও ধর্মীয় কেন্দ্রগুলোতে শোক সমাবেশ চলছে। বিক্ষোভ ও শোকানুষ্ঠানে অংশগ্রহণকারীরা যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরাইলের বিরুদ্ধে স্লোগান দিচ্ছেন এবং জেনারেল সুলাইমানি হত্যার প্রতিশোধ নেওয়ার দাবি জানাচ্ছেন।
তবে, ইরানের দাবি উড়িয়ে আমেরিকার সেক্রেটারি অফ স্টেট মাইক পম্পেও একটা টুইট করেন। সেখানে দেখা যায় সোলেমানির মৃত্যুতে আনন্দে মেতেছেন ইরাকিরা।
সোলাইমানিকে হত্যার পর পেন্টাগনের এক বিবৃতিতে বলা হয়, বিদেশে যুক্তরাষ্ট্রের লোকজনকে রক্ষায় প্রেসিডেন্টের নির্দেশনায় ইরাকে সোলাইমানিকে হত্যা করেছে মার্কিন সেনাবাহিনী। ভবিষ্যতে ইরানের হামলার পরিকল্পনা নস্যাৎ করতেই জেনারেল সোলাইমানিকে হত্যা করা হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বের যেকোনো স্থানে তার লোকজন ও স্বার্থ রক্ষায় সব ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া অব্যাহত রাখবে।
এদিকে জেনারেল সোলাইমানিকে হত্যা করার পরিণামে ভয়াবহ যুদ্ধ বেঁধে যেতে পারে বলে আমেরিকার প্রতি হুশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন ইরাকের প্রধানমন্ত্রী আদিল আবদুল-মাহদি। দেশটির প্রভাবশালী আলেম এবং রাজনৈতিক নেতা মুক্তাদা সাদর এ হত্যাকাণ্ডের পর মার্কিন সম্ভাব্য আরও হামলা মোকাবেলায় তার বাহিনীকে প্রস্তুত থাকার নির্দেশ দিয়েছেন।
বিগত কয়েকমাস ধরেই আমেরিকা ও ইরানের মধ্যে উত্তেজনার পারদ চড়ছিল। পরিস্থিতি আরও ঘোলাটে হয় গত রবিবার বাগদাদে মার্কিন দূতাবাসে ইরানপন্থী মিলিশিয়া বাহিনীর হামলার পর। তারপর শুক্রবার ভোরে আচমকা বাগদাদ এয়ারপোর্টে বিমান হামলা চালায় আমেরিকা। তিনটি রকেট ছোঁড়া হয়। এর ফলে ইরান এলিট গার্ড ফোর্সের প্রধান কমান্ডার কাশেম সোলাইমানি, পিএমএফ-এর ডেপুটি কমান্ডার আবু মেহদি আল-মুহানদিসসহ আটজনের মৃত্যু হয়।
ইরাকের আধাসামরিক বাহিনীর এক কর্মকর্তা জানান, ইরান থেকে কিছু শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তার ইরাকে আসার কথা ছিল। সেই কারণে বাগদাদ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে গিয়েছিলেন শীর্ষস্থানীয় প্রোটোকল অফিসার মহম্মদ রেদা। তিনি যখন ইরান এলিট গার্ড ফোর্সের প্রধান সোলাইমানি ও মুহানদিসকে নিয়ে বিমানবন্দর থেকে বের হচ্ছিলেন তখন কার্গো হলের কাছে তিনটি রকেট এসে পড়ে। এর ফলে ঘটনাস্থলে থাকা সবার মৃত্যু হয়- আল জাজিরা